ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন কি? আয় করার উপায়- গাইডলাইন

You are currently viewing ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন কি? আয় করার উপায়- গাইডলাইন

ওয়ার্ডপ্রেস (WordPress) হল একটি ব্লগ পাবলিশিং টুল এবং কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Content Management System) যাকে সংক্ষেপে CMS বলা হয়।

ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে খুব সহজেই ওয়েবসাইট তৈরি করা থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট পরিচালনা সহ যাবতীয় কাজ করা যায়। এর ব্যবহার খুব সহজ হওয়ায় এবং এটি নিরাপত্তার দিক থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী বিধায় এর জনপ্রিয়তা সব থেকে বেশি।

যেকোনো ধরনের প্রফেশনাল মানের ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় এই ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যার টিকে ব্যবহার করে। একটি পরিপূর্ণ ওয়েবসাইট তৈরি করতে যে যে ফিচার এর প্রয়োজন পড়ে তার প্রায় সব ধরনের ফিচারই রয়েছে ওয়ার্ডপ্রেস এর।

যে কারনে, অন্যান্য ওয়েবসাইট তৈরির সফটওয়্যার বা CMS এর তুলনায় ওয়ার্ডপ্রেস এর ব্যবহার এবং চাহিদা সব থেকে বেশি। বিশ্বের ছোট, বড়, অনেক নামি দামী প্রতিষ্ঠান এর ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়ে থাকে ওয়ার্ডপ্রেস কে ব্যবহার করে।

ওয়ার্ডপ্রেস কে ঘিরে মার্কেটে প্রচুর কাজ রয়েছে, এবং এসব কাজের চাহিদাও অনেক বেশি। বিশেষ করে বিভিন্ন ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেস (Freelancing Marketplace) গুলোতে ওয়ার্ডপ্রেস এর ওপর প্রচুর কাজ পাওয়া যায়।

এসব কাজের মধ্যে ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপমেন্ট এবং ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন খুবই জনপ্রিয়।

বর্তমানে, অনেকেই অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর জন্য ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপমেন্ট এবং থিম কাস্টমাইজেশন এর কাজগুলো করে দেয়ার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছে।

তাছাড়া বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন এর কাজ গুলোর ব্যাপক চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা দুটোই রয়েছে।

ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন কি (What is WordPress Theme Customization):

ওয়ার্ডপ্রেস এর একটি চমৎকার বৈশিষ্ট্য হল ওয়েবসাইট ডিজাইন পরিবর্তন তথা কাস্টমাইজেশন এর সুবিধা। ওয়ার্ডপ্রেস এর প্রায় প্রতিটা থিমেই ওয়েবসাইট কাস্টমাইজ করার ফিচার বা অপশন যুক্ত রয়েছে।

যার ফলে ওয়েবসাইট যেকোনো ধরনের ডিজাইন এবং কার্যক্ষমতায় পরিবর্তন আনা যায়। একটি ওয়েবসাইট দেখতে কেমন হবে, কোথায় কি ধরনের ফিচার সংযুক্ত থাকবে, ডিজাইন বা লেআউট (Layout) কেমন হবে সে বিষয় গুলো একটি থিম এর ওপর নির্ভর করে।

একটি থিমে প্রচুর ফিচার এবং অপশন যুক্ত করা থাকে। যেগুলো কাস্টমাইজ করে ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট করার কাজে ব্যবহৃত হয়।

ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন বলতে মূলত ওয়েবসাইটে এক্নটি থিম কে নিজের পছন্দ মত পরিবর্তন, বা নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী ডিজাইন করাকে বোঝায়। প্রয়োজনে ওয়েবসাইটের ডিজাইন পরিবর্তন, নতুন ফিচার যুক্ত করা, বা ওয়েবসাইট কে আরও আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করা। অর্থাৎ একটি ওয়েবসাইট কে সাজিয়ে এবং পরিপূর্ণ রুপ দেয়ার জন্য যা যা করতে হয় সেটাই হল থিম কাস্টমাইজেশন।

ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট এর জন্য প্রচুর ফ্রি এবং প্রিমিয়াম থিম পাওয়া যায়। এসব থিম ব্যবহার করে খুব সহজেই ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়।

ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপমেন্ট এবং থিম কাস্টমাইজেশন এর মধ্যে পার্থক্যঃ

যদিও ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরি করার কাজে থিম ডেভেলপমেন্ট এবং থিম কাস্টমাইজেশন দুটোরই দরকার হয়। কিন্তু থিম কাস্টমাইজেশন এবং থিম ডেভেলপমেন্ট এর মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।

থিম ডেভেলপমেন্ট বলতে মূলত কোডিং করে একদম শুরু থেকে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট তথা থিম ডেভেলপমেন্ট করতে হয়। এক্ষেত্রে যারা programming করতে পারেন এবং ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার তারাই মূলত থিম ডেভেলপমেন্ট এর কাজ গুলো করে থাকেন।

একজন থিম ডেভেলপার হতে গেলে অবশ্যই প্রাগামিং এ দক্ষ হতে হবে । এক্ষেত্রে একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার বা থিম ডেভেলপার হিসেবে HTML, CSS, JAVASCRIPT, jQuery, PHP, MySQL, এবং WordPress সম্পর্কে বেশ ভালো জ্ঞ্যান থাকতে হবে।

অন্য দিকে, থিম কাস্টমাইজেশন হল রেডিমেড থিম কে নিজের মত ব্যবহার করে ওয়েবসাইট সেট আপ করা।

বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য মার্কেট এ প্রচুর প্রিমিয়াম থিম পাওয়া যায়। যেগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে যেকোনো ধরনের ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠান এর ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য। আবার এসব থিমে প্রচুর টেম্পলেট(Templates) ও যুক্ত করা থাকে যেগুলো ব্যবহার করে নিমিষেই ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলা যায়।

যদিও থিম কাস্টমাইজেশন এর ক্ষেত্রে প্রোগ্রামিং জানাটা বাধ্যতা মুলক নয় কিন্তু কিভাবে থিম কাস্টমাইজ করতে হয় এবং থিমের কাজ গুলো কি কি ধরনের হয়ে থাকে, প্রিমিয়াম থিম কিভাবে ব্যবহার করতে হয় ইত্যাদি বিষয় জানা থাকলে থিম কাস্টমাইজ করে ওয়েবসাইট তৈরি করা অনেক সহজ হয়ে যায়।

ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন নাকি থিম ডেভেলপমেন্ট- নতুনদের জন্য কোনটি শেখা উচিতঃ

আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস কে ব্যবহার করে অনলাইনে আয় করতে চান সেক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস এর ব্যবহার ভালভাবে শেখাটা জরুরী।

অনেকেই ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, থিম, প্লাগিন ডেভেলপমেন্ট করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকেন। পাশাপাশি থিম কাস্টমাইজেশন করে দেয়ার মাধ্যমে অনেকেই বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছেন।

যারা মূলত ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার বা থিম ডেভেলপার তারা থিম ডেভেলপমেন্ট এবং থিম কাস্টমাইজেশন দুটোই করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি যদি একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার তথা থিম ডেভেলপার হয়ে থাকেন তাহলে একসঙ্গে এই দুই ধরনের সেবা ক্লাইন্টদেরকে অফার করতে পারবেন।

অন্যদিকে, আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস এ একদম নতুন হয়ে থাকেন এবং কোডিং সম্পর্কে ভালো জ্ঞ্যান না থাকে, সেক্ষেত্রে থিম কাস্টমাইজেশন শেখাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

যদিও একটি প্রফেশনাল মানের ওয়েবসাইট বা কাস্টম ডিজাইনের ওয়েবসাইট তৈরি করতে হলে প্রোগ্রামিং জ্ঞ্যান থাকাটা জরুরী, তারপরও চাইলে বিভিন্ন ধরনের প্রিমিয়াম থিম, প্লাগিন, এবং ওয়ার্ডপ্রেস এর ব্যবহার ভালো ভাবে শিখে নিয়ে অনলাইনে কাজ করতে পারবেন।

ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন কাজের চাহিদাঃ

বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপারদের প্রচুর মার্কেট ডিম্যান্ড(Market Demand) বা চাহিদা রয়েছে। যেহেতু ওয়ার্ডপ্রেস এর চাহিদা বেশি সেহেতু এ সম্পর্কে কাজের পরিমাণ ও অনেক বেশি।

ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট থিম ডেভেলপমেন্ট এর পাশাপাশি থিম কাস্টমাইজেশন কাজেরও বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে একটু খেয়াল করলেই এসব কাজের পরিমাণ এবং কাজের চাহিদা অনুমান করা যায়।

যাইহোক, সারা বিশ্বে এমন অনেক ধরনের ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের বাজেট খুব কম থাকে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য। প্রোফেসনাল প্রোগ্রামার বা ওয়েব ডেভেলপারদের দিয়ে কাস্টম ডিজাইনের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে যে পরিমাণ খরচ বা বাজেটের প্রয়োজন হয় সেরকম বাজেট অনেক প্রতিষ্ঠানরই থাকেনা।

যার ফলে অনেকেই ওয়ার্ডপ্রেস এর প্রিমিয়াম থিম অল্প দামে কিনে সেগুলো ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে যারা থিম কাস্টমাইজেশন এ দক্ষ তাদের মাধ্যমেই এ কাজ গুলো করানো হয়ে থাকে। ফলে এসব কাজের জন্য মার্কেট এ বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে।

থিম কাস্টমাইজেশন এর সাথে আরও যেধরনের কাজ রয়েছেঃ

ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন এর সাথে ওয়ার্ডপ্রেস এর অনেক ধরনের কাজ রয়েছে। শুধু মাত্র ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজ করে ওয়েবসাইট তৈরি করে দিলেই যে কাজ শেষ ব্যাপারটি সেরকম না।

এর সাথে আরও বেশ কিছু কাজের সম্পর্ক রয়েছে। যেগুলো একজন ওয়ার্ডপ্রেস এক্সপার্ট হিসেবে অবশ্যই জানা দরকার।

যেমন, ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট স্থানান্তর (WordPress Website Migration), ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট এর নিরাপত্তা (WordPress Security), ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট স্পীড অপটিমাইজেশন(WordPress Speed Optimization), ইকমারস (eCommerce site development), ওয়েবসাইট এর ত্রুটি সমাধান (error fixing), ইত্যাদি বিষয় সহ আরও অনেক।

থিম কাস্টমাইজেশন এর কাজ যেখানে পাওয়া জাবেঃ

বেশ কয়েকটি ফ্রিলান্সিং মার্কেট প্লেস গুলোতে ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরির ওপর অনেক ধরনের কাজ পাওয়া যায়। থিম কাস্টমাইজেশনের ও বেশ ভালো কাজের চাহিদা রয়েছে এসব ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে। এর মধ্যে Fiverr, Freelancer.com, Upwork বেশ জনপ্রিয়।

তবে, এদের মধ্যে নতুনদের জন্য ফাইভার এ কাজ করার বেশ ভালো সুবিধা রয়েছে। কেননা এখানে আলাদা ভাবে নিজের স্কিল বা দক্ষতা অনুসারে গিগ তৈরি করে ক্লাইন্টদেরকে কাজের অফার দেয়া যায়।

পাশাপাশি এখন দেশেও এসব কাজের বেশ ভালো ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ এসব কাজ গুলো Local Job হিসেবেও করা যেতে পারে

পরিশেষেঃ

তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন কি, এবং কিভাবে থিম কাস্টমাইজেশন করে আয় করা যায়।

যাইহোক, থিম কাস্টমাইজেশন করে আয় করার বেশ ভালো সুযোগ থাকলেও এই সেক্টর এ যথেষ্ট কম্পিটিশন বা প্রতিযোগিতা রয়েছে। ফলে নতুন অনেকের জন্যই কাজ পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বিশেষ করে বিভিন্ন ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে।

তবে খুব ভালো মানের ওয়ার্ডপ্রেস এক্সপার্ট হতে পারলে এবং ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে বেশ ভালো অভিজ্ঞতা থাকলে অনলাইনে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সুতরাং আপনাকে অবশ্যই ওয়ার্ডপ্রেস এ এক্সপার্ট হয়ে একাজ গুলো শুরু করতে হবে।

Leave a Reply