ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করার বিষয়টি বর্তমানে খুবই জনপ্রিয়। ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে ওয়ার্ডপ্রেস এর সাথে পরিচিত নন এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল।
বিশ্বের ছোট, বড় বা মাঝারি যেকোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটির ব্যবহার সহজ ইউজার ফ্রেন্ডলি (User-Friendly) হওয়ায়, অন্যান্য ওয়েবসাইট তৈরি প্লাটফর্ম বা CMS এর তুলনায় WordPress খুবই জনপ্রিয়।
যাইহোক, অনেকেই ওয়ার্ডপ্রেস নামটির সাথে পরিচিত হলেও, ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে ধারণা খুবই কম অথবা নতুন অনেকেই আছেন যারা ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে চাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস কি, কেন ওয়ার্ডপ্রেস শেখা দরকার, ওয়ার্ডপ্রেস কি কাজে ব্যবহৃত হয়, ওয়ার্ডপ্রেস শেখার উপায় কি, ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার উপায়গুলো কি কি, ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানা দরকার।
ওয়ার্ডপ্রেসকে ব্যবহার করে অনলাইনে আয়ের ব্যাপারেই হোক আর নিজের বিজনেস বা ওয়েবসাইট/ ব্লগ তৈরির জন্যই হোক, অনেকের কাছে WordPress শেখার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
মূলত, আজকের এই পোস্ট থেকে ধারণা পাওয়া যাবে ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় যেমন- ওয়ার্ডপ্রেস কি, WordPress এর ব্যবহার কি, কেন ওয়ার্ডপ্রেস শিখবেন, ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার উপায় সহ আরও অনেক কিছু।
ওয়ার্ডপ্রেস কি (What is WordPress):
ওয়ার্ডপ্রেস হল একটি জনপ্রিয়, ফ্রি এবং ওপেন সোর্স (Open Source) ওয়েবসাইট তৈরির প্লাটফর্ম। যা পিএইচপি এবং মাইএসকিউএল দ্বারা তৈরি। ওয়ার্ডপ্রেস কি? এটিকে সহজ ভাষায় বললে বোঝায় ওয়েবসাইট তৈরি করার সফটওয়্যার।
যেটিকে ব্যবহার করে কোন ধরনের প্রোগ্রামিং জ্ঞান ছাড়াই যেকোনো ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করা এবং পরিচালনা করা যায়।
মূলত, WordPress হল একটি জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত ব্লগ পাবলিশিং টুল এবং কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Content Management System) সংক্ষেপে সিএমএস বলা হয়। একটি ওয়েবসাইটে অনেক ধরনের কন্টেন্ট থাকে যেমন লেখা, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি, এসব কন্টেন্ট গুলোকে পরিবর্তন বা পরিচালনা করাকে কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট বলা হয়।
আর ওয়ার্ডপ্রেস হচ্ছে সব থেকে জনপ্রিয় কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা CMS। যেটিকে ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের সমস্ত কন্টেন্ট গুলোকে ম্যানেজমেন্ট তথা পরিচালনা করা যায় কোন ধরনের প্রোগ্রামিং জ্ঞ্যান ছাড়াই।
সারা বিশ্বে প্রায় ৪০ শতাংশ এরও বেশি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়ে থাকে এই WordPress সফটওয়্যার টিকে ব্যবহার করে এবং বলা হয়ে থাকে প্রতি ৪টি ওয়েবসাইট এর মধ্যে একটি ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দ্বারা তৈরি।
এটির ব্যবহার অনেক সহজ এবং ব্যবহারকারী বান্ধব হওয়ায়, অন্যান্য ওয়েবসাইট তৈরির সফটওয়্যার এর তুলনায় এটি সব থেকে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
অন্য আরও যেসব ওয়েবসাইট তৈরির সফটওয়্যার বা CMS রয়েছে, যেমন- Joomla, Magento, Drupal, Open-Cart এসবের মধ্যে ওয়ার্ডপ্রেস এর ব্যবহার সব থেকে বেশি।
ওয়ার্ডপ্রেস কেন এত জনপ্রিয়? ওয়ার্ডপ্রেস এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যঃ
পুরো বিশ্বে লাখ লাখ প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইট তৈরি এবং পরিচালনার কাজে ওয়ার্ডপ্রেসকে ব্যবহার করে থাকে। এমন অনেক নামী-দামী প্রতিষ্ঠান ও রয়েছে যাদের ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে ওয়ার্ডপ্রেসকে ব্যবহার করে।
যাইহোক, ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যারটি বেশি পরিচিত বা জনপ্রিয়তা অর্জন করার পেছনে অনেক গুলো কারণ রয়েছে, যেমন-
- এটি ব্যবহার করা সম্পূর্ণ ফ্রি। এটিকে সরাসরি wordpress.org থেকে ডাউনলোড করে ওয়েবসাইট এ ইন্সটল করে ব্যবহার করা যায় কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই।
- এটি ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং ব্যবহারকারী বান্ধব (User-Friendly)। এটিকে ব্যবহার করে খুব সহজেই দারুন সব ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলা যায়। কোন ধরনের কোডিং জ্ঞ্যান ছাড়াই যেকেউ তার ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে পারে।
- নিরাপত্তার (Security) দিক থেকে WordPress যথেষ্ট শক্তিশালী। ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়ার সুযোগ খুবই কম। তাছাড়া এটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিনিয়তই জোরদার করা হয় অর্থাৎ নিরাপত্তার বিষয় টিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়। যা অন্যান্য প্লাটফর্ম এর দিক থেকে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করা সব থেকে বেশি নিরাপদ।
- ওয়ার্ডপ্রেস সব থেকে বেশি ফিচার সমৃদ্ধ। এটিতে প্রায় সব ধরনেরই ফিচার যুক্ত রয়েছে অর্থাৎ একটি পুরনাঙ্গ ওয়েবসাইট তৈরি করতে যে যে ফিচার এর দরকার হয় তার সমস্ত ফিচারই এখানে রয়েছে। পাশাপাশি ওয়েবসাইট এর কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত ফিচার (Feature) বা ফাংশোনালিটি (Functionality) যুক্ত করারও সুযোগ রয়েছে।
- ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করতে খরচ খুবই কম হয়। অর্থাৎ অল্প বাজেটের মধ্যেই যেকোনো ধরনের প্রফেশনাল বিজনেস ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। যার ফলে এটিকে মানুষ সব থেকে বেশি ব্যবহার করে থাকে।
- WordPress এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হল এটি সার্চ ইঞ্জিন বান্ধব (Search Engine Friendly)। মূলত এটিকে তৈরি করা হয়েছে সার্চ ইঞ্জিন বান্ধব করে। যার ফলে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন(Search Engine Optimization) নিয়ে চিন্তিত হতে হয়না।
- ওয়ার্ডপ্রেস এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এটির শেখার বা জানার জন্য প্রচুর রিসোর্স রয়েছে। অর্থাৎ তাছাড়া, ওয়ার্ডপ্রেসকে ঘিরে অনলাইনে অসংখ্য Community Forum বা Website এবং রিসোর্স রয়েছে। যার ফলে ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে সমস্যা হলে খুব সহজেই সমাধান বের করা যায়।
WordPress.com ও WordPress.org এর মধ্যে পার্থক্যঃ
অনেকেই ওয়ার্ডপ্রেস কি এই বিষয়টিকে বুঝতে গিয়ে wordpress.com এবং wordpress.org এই দুইটিকে গুলিয়ে ফেলেন। বিশেষ করে নতুন অনেকের মধ্যেই এই সমস্যাটি বেশি হয়।
আবার অনেকেই আছেন যারা WordPress বলতে শুধু মাত্র wordpress.com কেই বুঝে থাকেন। যাইহোক, wordpress.com এবং wordpress.org মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
wordpress.org কিঃ
- wordpress.org হল self-hosted, ফ্রি এবং ওপেন সোর্স সফটওয়্যার যেটিকে ব্যবহারে করে ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় এবং এটি ব্যবহার করা সম্পূর্ণ ফ্রি। অর্থাৎ এটিকে আপনি ডাউনলোড করে আপনার ওয়েবসাইট তৈরির কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
- এই ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যার টিকে ব্যবহার করতে হলে আপনার নিজস্ব ডোমেইন নেম এবং হোস্টিং সার্ভার কিনে নিতে হবে।
- বেশিরভাগ হোস্টিং সার্ভার এর সাথে WordPress Software টি আগে থেকেই যুক্ত করা থাকে, যা সরাসরি ইন্সটল করে ওয়েবসাইট সেট আপ করা যায়।
- এই ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যারটি সম্পূর্ণ নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন। অর্থাৎ আপনি যেকোনো সময় যেভাবে ইচ্ছা এটিকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করা বা আপনার ওয়েবসাইট কে নিজের মত পরিচালনা (Editing, Customization, Management) করতে পারবেন।
- Website তৈরি করার জন্য wordpress.org এ প্রচুর ফ্রি থিম এবং প্লাগিন রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে নিজের মত করে ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়।
- সর্বোপরি wordpress.org অর্থাৎ ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যার টি বহুল ব্যবহৃত ওপেন সোর্স কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা CMS, যেটি সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হয় যেকোনো ধরনের প্রোফেসনাল ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য।
আমরা এই পোস্ট এ পূর্বে ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে যেসব বিষয়ে আলোচনা করেছি তা মূলত এই wordpress.org কে ঘিরেই।
wordpress.com কিঃ
WordPress.com হল ওয়ার্ডপ্রেস এর একটি Hosted ভার্সন। মূলত এটি একটি পেইড প্লাটফর্ম যেটি পরিচালিত হয় WordPress সফটওয়্যার কে ব্যবহার করেই।
- wordpress.com হচ্ছে একটি web hosting platform। তবে অন্যান্য ওয়েব হোস্টিং সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান এর মত তারা সে সব সুবিধা দেয়না বরং তারা তাদের নিজস্ব হোস্টিং সার্ভার এর সুবিধা দিয়ে থাকে ওয়েবসাইট তৈরি (Launce) করার জন্য।
- WordPress.com এ ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য এখানে নিজের একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হয়।
- এখানে ডোমেইন এবং হোস্টিং ক্রয় করা ছাড়াই ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়।
- যদিও এটি ফ্রিতে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে কিন্তু বেশির ভাগ ফিচার গুলোই সীমিত আকারে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ এর সব ফিচার ব্যবহার করতে চাইলে পেইড প্লান কিনে নিতে হবে।
- এখানে ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা খুবই কম। অর্থাৎ আপনি চাইলে আপনার পছন্দ মত ওয়েবসাইট এর অনেক কিছুই পরিবর্তন বা সংযোজন করতে পারবেন না।
মূলত wordpress.com ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করা খুবই ব্যয়বহুল এবং অনেক ঝামেলার বিষয়। কিন্তু wordpress.org হচ্ছে সব থেকে সেরা উপায় যেকোনো ধরনের ওয়েবসাইট বানানোর জন্য এবং ম্যানেজমেন্ট করার জন্য।
অর্থাৎ আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট এর সকল ক্ষমতা স্বাধীনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চান এবং আপনার বিজনেস ওয়েবসাইটকে অনেক বড় পরিসরে নিয়ে আসতে চান তাহলে অবশ্যই wordpress.org এর WordPress সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে হবে এবং এটাই ব্যবহার করা উচিত।
ওয়ার্ডপ্রেস থিম এবং প্লাগিন কি?
WordPress এর একটি চমৎকার বৈশিষ্ট্য হল এর থিম এবং প্লাগিন এর ব্যবহার। যেগুলোর ব্যবহারের মাধ্যমেই ওয়েবসাইট এর যাবতীয় পরিবর্তন আনা যায়।
ওয়ার্ডপ্রেস থিম কি (What is WordPress Theme):
ওয়ার্ডপ্রেস থিম হল মূলত ওয়েবসাইট এর কাঠামো (Framework)। অর্থাৎ একটি ওয়েবসাইট এর ডিজাইন কেমন হবে, কোথায় কি ধরনের ফিচার যুক্ত থাকবে, বা ফাংশন কেমন হবে, সেসব বিষয় নির্ভর করে একটি থিমের ওপর।
WordPress Website তৈরির জন্য হাজারো রকমের ফ্রি এবং প্রিমিয়াম থিম পাওয়া যায়। একেক থিমে একেক রকমের ফিচার বা অপশন যুক্ত করা থাকে এবং ডিজাইনেও অনেকটা পার্থক্য থাকে।
একটি থিমে ওয়েবসাইট এর কালার, ফন্ট, লেআউট স্টাইল (Layout Style) ইত্যাদি বিষয় সহ আরও অনেক রকমের ফিচার যুক্ত করা থাকে ওয়েবসাইট টিকে ভালভাবে কাস্টমাইজ করার জন্য।
ওয়ার্ডপ্রেস ড্যাশবোর্ড Appearance থেকে থিম অপশন গিয়ে থিম ইন্সটল করার অপশন পাওয়া যাবে এবং থিম ইন্সটল করার পর Theme Customizer টুলটি ব্যবহার করে পুরো ওয়েবসাইট টিকে ডিজাইন বা কাস্টমাইজ করা যাবে।
WordPress.org এ ওয়ার্ডপ্রেস এর যাবতীয় ফ্রি থিম পাওয়া যায়।
প্রিমিয়াম থিমের কিছু জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস গুলো হল-
Themeforest
Mythemeshop
Eleganthemes
Themegrill
CSSigniter
Templatemonster
এগুলো ছাড়াও আরও অনেক মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যেখানে ওয়ার্ডপ্রেস প্রিমিয়াম থিম এবং প্লাগিন কেনা যায়।
ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন কি (WordPress Plugin):
ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার জন্য এবং নতুন ডিজাইন বা ফিচার যুক্ত করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস এর প্লাগিন এর ব্যবহার রয়েছে।
ওয়ার্ডপ্রেসের প্লাগিন অনেকটা স্মার্টফোন এ ব্যবহৃত সফটওয়্যার এর মত। স্মার্টফোন এর জন্য যেমন অনেক ধরনের অ্যাপ বা সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো স্মার্টফোন এ ইন্সটল করে ব্যবহার করা যায়।
তেমনি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট এর জন্য হাজারো রকমের প্লাগিন পাওয়া যায়। যেগুলো ওয়ার্ডপ্রেস ড্যাশবোর্ড থেকে ইন্সটল করে ওয়েবসাইটিকে আরও সুন্দরভাবে সাজানো বা কর্মক্ষমতা বাড়ানো যায়
অর্থাৎ আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে যেভাবে খুশি সেভাবে সাজানো বা কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন এসব প্লাগিন এর মাধ্যমে। ওয়ার্ডপ্রেস এর ফ্রি এবং প্রিমিয়াম দুই ধরনেরই প্লাগিন পাওয়া যায়।
ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে কি কি ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়ঃ
একসময় ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহৃত হত শুধুমাত্র ব্লগ তৈরি এবং ছোট খাটো ওয়েবসাইট পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে এটি বিভিন্ন পরিবর্তন এর মধ্য দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
এখন আর এটি শুধু মাত্র ব্লগিং এর জন্যই ব্যবহার করা হয়না বরং এটি ব্যবহার করা হয় যেকোনো ধরনের পার্সোনাল বা বিজনেস ওয়েবসাইট তৈরি এবং পরিচালনার কাজে।
ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে যেকোনো ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলা যায় এবং কোন ধরনের কোডিং জ্ঞ্যান ছাড়াই যেকেউ ওয়েবসাইটকে পরিচালনা করতে পারে।
ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে যেসব ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়-
১। পার্সোনাল ব্লগ (Personal Blog)
২। নিউজ ওয়েবসাইট (News Website)
৩। ম্যাগাজিন ওয়েবসাইট (Magazine)
৪। পোর্টফলিও (Portfolio Website)
৫। ফুড এন্ড রেস্টুরেন্ট (Food & Restaurant Website)
৬। রিয়েল স্টেট ওয়েবসাইট(Real State)
৭। ফোরাম (Forum Website)
৮। বিজনেস ওয়েবসাইট (Business website)
৯। মেম্বারশিপ (Membership website)
১০। ইকমারস ওয়েবসাইট (eCommerce Website) ইত্যাদি
এগুলো ছাড়াও আরও বহু রকমের ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়ে থাকে ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যারটিকে ব্যবহার করে।
ওয়ার্ডপ্রেস কেন শিখবেন? WordPress শেখার প্রয়োজনীয়তাঃ
তাহলে এখন কথা হল ওয়ার্ডপ্রেস কেন শিখবেন বা ওয়ার্ডপ্রেস শেখার প্রয়োজনীয়তা কি। যাইহোক ওয়ার্ডপ্রেস শেখার পেছনের অনেক গুলো কারণ থাকতে পারে। নিচে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হল।
১। নিজের বিজনেস এর জন্য
আপনি যদি নিজের ব্যবসাকে অনলাইনে নিয়ে আসতে চান সেক্ষেত্রে একটি ওয়েবসাইট এর প্রয়োজন হবে আর এক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস শিখলে আপনি নিজেই আপনার বিজনেস এর জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করা এবং পরিচালনা করতে পারবেন। যেকোনো ধরনের বিজনেস বা ইকমারস ওয়েবসাইট কে সঠিক ভাবে পরিচালনা বা ম্যানেজমেন্ট করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস শেখাটা অত্যন্ত কার্যকরী।
২। ব্লগিং
বর্তমানে ব্লগিং খুবই জনপ্রিয় একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এক্ষেত্রে ব্লগিং এর জন্য ওয়ার্ডপ্রেস হল সব থেকে জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম। প্রচুর সুযোগ সুবিধা থাকায় এবং এই সফটওয়্যার এর ব্যবহার শিখতে অনেক কম সময় লাগায়, সব ব্লগারদের কাছেই ওয়ার্ডপ্রেস খুবই জনপ্রিয়।
যাইহোক, আপনি চাইলে আপনার নিজের ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করা এবং পরিচালনা করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে পারেন।
৩। ফ্রিল্যান্সিং- অনলাইনে আয় করার জন্য
বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেসকে ব্যবহার করে অনলাইনে আয়ের দারুন একটি পথ তৈরি হয়েছে। চাইলে ওয়ার্ডপ্রেস কে ব্যবহার করে অনলাইনে নিজের একটি ক্যারিয়ার দাঁড় করানো যেতে পারে। অনেকেই ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে অনলাইনে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করে থাকেন।
ওয়ার্ডপ্রেস কে ঘিরে অনলাইনে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে প্রচুর কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। চাইলে ওয়ার্ডপ্রেস ভালভাবে শিখে নিয়ে, একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সেসব মার্কেটপ্লেস গুলোতে ওয়ার্ডপ্রেস এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করে আয় করতে পারেন।
৪। ফিক্সড জব
এখন ছোট বা মাঝারি অনেক ধরনের প্রতিষ্ঠানই এখন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে তাদের বিজনেস ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট করার জন্য। এক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস এর ব্যবহার ভালো ভাবে জানা থাকলে বা একজন প্রোফেসনাল ওয়ার্ডপ্রেস এক্সপার্ট হতে পারলে দেশীয় বা বেদেশি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে ফিক্সড জব করা যেতে পারে।
সুতরাং, ওয়ার্ডপ্রেস শিখে নিয়ে এটিকে বিভিন্ন উপায়ে কাজে লাগান যেতে পারে।
ওয়ার্ডপ্রেস কিভাবে শিখবেন-ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে কি কি লাগেঃ
অনেকেই ওয়ার্ডপ্রেস কিভাবে শিখব বা ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে কি কি লাগে এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবনায় পড়ে যান? যাইহোক, ওয়ার্ডপ্রেস শেখার জন্য বিশেষ কোন কিছুর দরকার হয়না।
ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে বেসিক ধারণা যেমন ওয়ার্ডপ্রেস কি, ওয়ার্ডপ্রেস কিভাবে কাজ করে, ওয়ার্ডপ্রেস এর ফিচার গুলো অর্থাৎ ওয়ার্ডপ্রেস এর মুল যে কার্যাবলী সেসব বিষয়ে কিছুটা ধারণা থাকলেই ওয়ার্ডপ্রেস সেখা অনেক সহজ হয়ে যায়।
আর যেহেতু ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং কোডিং জ্ঞ্যান ছাড়াই ওয়েবসাইট তৈরি এবং পরিচালনা করা যায়, সুতরাং যেকেউ চাইলে ওয়ার্ডপ্রেস খুব দ্রুত শিখে ফেলতে পারে।
তবে, যাদের কোডিং জ্ঞান ভালো আছে তাদের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস শেখাটা আরও অনেক সহজ। যাইহোক, ওয়ার্ডপ্রেস শেখার জন্য ইন্টারনেটে প্রচুর রিসোর্স বা টিউটোরিয়াল রয়েছে।
পাশাপাশি ওয়ার্ডপ্রেস শেখার অনেক ফ্রি এবং প্রিমিয়াম কোর্সও রয়েছে। এক্ষেত্রে, ওয়ার্ডপ্রেস ফ্রিতে শেখার জন্য ইউটিউব হল একটি সেরা প্লাটফর্ম। কেননা এখানে ওয়ার্ডপ্রেস এর ওপর প্রচুর টিউটোরিয়াল রয়েছে। চাইলে ইউটিউব দেখেই ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে ভালো জ্ঞান অর্জন করা যেতে পারে।
তাছাড়া, ওয়ার্ডপ্রেস এর প্রিমিয়াম কোর্স করার জন্য Udemy হল সব থেকে জনপ্রিয় প্লাটফর্ম। তবে এখান থেকে কোর্স করতে হলে ইংরেজি ভাষা জানতে হবে।
এছাড়াও দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানই ওয়ার্ডপ্রেস এর ওপর বিভিন্ন ধরনের প্রিমিয়াম কোর্স বিক্রি করে থাকে। চাইলে সেসব কোর্স করেও ওয়ার্ডপ্রেস শেখা যেতে পারে।
তবে আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার বা থিম ডেভেলপার হতে চান তাহলে অবশ্যই প্রোগ্রামিং যেমন HTML, CSS, JAVASCRIPT, jQuery, PHP, MySQL ইত্যাদি বিষয় জানতে হবে অর্থাৎ আপনাকে ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট শিখতে হবে এবং ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপমেন্ট এর ওপর আলাদা কোর্স করে নিতে পারেন।
ওয়ার্ডপ্রেস শেখার জন্য কয়েকটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এর তালিকাঃ
১। WP Beginner
৩। WP 101
৫। WordPress TV
৮। Udemy
৯। WP KUBE
ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয়ঃ
এবার জানা যাক ওয়ার্ডপ্রেস শিখে কি কি উপায়ে আয় করা যায়। ওয়ার্ডপ্রেস ভালভাবে শিখে নিতে পারলে এবং ওয়ার্ডপ্রেস এ দক্ষ হতে পারলে অনলাইনে প্রচুর কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেস থেকে শুরু করে এখন দেশীয় বা বিদেশি বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য ভালমানের ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপারদের বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে।
যাইহোক, ওয়ার্ডপ্রেস শিখে যে যে উপায়ে আয় করা যেতে পারে-
১। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing)
WordPress শিখে অনলাইনে আয় করার অন্যতম এবং সেরা উপায় হল ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অনেকেই বেশ ভালো পরিমাণ টাকা আয় করছে।
বর্তমানে বেশ কয়েকটি ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেস রয়েছে যেগুলোতে ওয়ার্ডপ্রেস এর প্রচুর ফ্রিল্যান্স জব পাওয়া যায়।
ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে, ওয়েবসাইট এর নিরাপত্তা, ওয়েবসাইট Maintenance, Website Migration, Theme Development, Plugin and extension Development, Theme Customization সহ অনেক ধরনের কাজ রয়েছে এসব ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলোতে।
২। ফিক্সড জব (Fixed Job)
এখন প্রায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই তাদের ওয়েবসাইট গুলো ডেভেলপমেন্ট মেইন্টেইন করার জন্য কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে।
একজন WordPress Expert হিসেবে সেই সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েবসাইট ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট এবং মেইন্টেইন করার জন্য ফিক্সড জব করা যেতে পারে।
তাছাড়া, দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন ওয়েব ডেভেলপারদের বেশ ভালো বেতনে চাকুরী দিয়ে থাকে। সুতরাং, আপনি চাইলে দেশীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথেও কাজ করতে পারেন।
৩। অনলাইন বিজনেস (Online Business)
WordPress শিখে আপনি চাইলে নিজের একটি অনলাইন বিজনেস ও শুরু করে দিতে পারেন। যেখানে আপনি আপনার স্কিল বা দক্ষতা গুলোকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিদের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরি করে দিতে পারেন।
অর্থাৎ আপনি চাইলে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এর একটি নিজস্ব বিজনেস শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে লোকাল সার্ভিস দেয়ার পাশাপাশি বিদেশী প্রতিষ্ঠান এর জন্য ও এসব সেবা প্রদান করা যেতে পারে।
তাছাড়া ওয়ার্ডপ্রেস শিখে নিয়ে নিজের অন্যান্য বিজনেস এর কাজেও লাগানো যেতে পারে। যেমন, ইকমারস ওয়েবসাইট পরিচালনা করা। এছাড়াও অন্য যেকোনো কাজের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস দক্ষতা কে কাজে লাগান যেতে পারে।
৪। ব্লগিং
ওয়ার্ডপ্রেস থেকে আয় করার আরেকটি জনপ্রিয় উপায় হল ব্লগিং। আপনি যদি খুব ভালো ভাবে ওয়ার্ডপ্রেস এর ব্যবহার শিখে নিতে পারেন তাহলে আপনি নিজেই আপনার ব্লগ তৈরি করা থেকে ব্লগ সঠিকভাবে পরিচালনা বা যাবতীয় কাজ গুলো সম্পাদন করতে পারবেন।
অর্থাৎ আপনি ওয়ার্ডপ্রেস স্কিলটা কে আপনার ব্লগিং এ কাজে লাগিয়ে ব্লগ থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ব্লগ তৈরি করার জন্য অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবেনা। যেহেতু আপনি নিজেই এসব কাজ করতে পারবেন।
৫। ওয়ার্ডপ্রেস প্রোডাক্ট তৈরি
বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস পণ্য বা প্রোডাক্ট এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে ওয়ার্ডপ্রেস এর জন্য তৈরি করা পণ্য গুলো বেশ ভালো দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হয়ে থাকেন এবং ওয়ার্ডপ্রেস এর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট যেমন থিম, প্লাগিন, এক্সটেন্সান, তৈরি করতে পারেন তাহলে সেগুলো অনলাইনে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস এ বিক্রি করে দেয়ার মাধ্যমেও অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস এর প্রোডাক্ট এর সব থেকে বড় মার্কেটপ্লেস হল Themeforest। চাইলে আপনি এখানেও আপনার তৈরি করা থিম অথবা প্লাগিন বিক্রি করে দেয়ার মাধ্যমেও আয় করতে পারবেন।
WordPress শিখে আরও যেসব উপায়ে আয় করা যায় জানতে পড়ুন – ওয়ার্ডপ্রেস থেকে আয় করার ১০টি সেরা উপায়।
পরিশেষেঃ
তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন ওয়ার্ডপ্রেস কি, কেন শিখবেন এবং ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আয় করার উপায় গুলো কি কি।
পাশাপাশি আমরা এখানে wordpress.com এবং wordpress.org এর মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি যাতে নতুন ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারী সহজেই বুঝতে পারেন কোনটির কি ব্যবহার এবং কোনটি ব্যবহার করা উচিত।
যাইহোক, নতুন অবস্থায় ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে গেলে নানারকম সমস্যা তৈরি হবে। কিন্তু সেগুলো দ্রুত সমাধান করার অনেক উপায়ও আছে অনলাইনে। একটু খোঁজাখুজি করলেই এসব সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব।
I learned a lot from your blog and most of all thank you for explaining in such a beautiful way.