ইউটিউব চ্যানেল শুরু করার আগে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে যে ইউটিউবিং কেন শুরু করবো, ইউটিউব চ্যানেল শুরু করার লাভ গুলো কি, বা একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকার উপকারিতাগুলো কি কি, এবং কেন মানুষ ইউটিউবিং করছে, ইত্যাদিসহ আরও অনেক বিষয়।
আপনি যদি ইউটিউবিং শুরুর করতে চান বা একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে চান তাহলে অবশ্যই আজকের এই পোস্ট আপনার জন্যই।
কেননা এখান থেকে আপনি ধারণা নিতে পারবেন কেন আপনি একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করবেন এবং শুরু করাটা আপনার জন্য উচিত হবে কিনা।
যাইহোক, সবাই কিন্তু ইউটিউব এ টাকা আয়ের উদ্দেশ্যেই চ্যানেল বা ভিডিও তৈরি করেনা। কেউবা শখের বশে, কেউবা নিজের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য, কেউবা অন্যদের সাহায্য করার জন্য ইউটিউবিং করে থাকে।
এরকম অনেক গুলো কারণ রয়েছে যেসকল কারনে মানুষ নিজেরদের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও তৈরি করে থাকে।
একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করার উপকারিতা (Benefits of starting a YouTube Channel)
১। Personal-Branding
সোজা কথায় Personal Branding বা Self-Branding বলতে বোঝায় নিজের পরিচিতি বৃদ্ধি করা বা অন্যদের কাছে নিজের পরিচিতি বাড়ানো। এক্ষেত্রে নিজের জ্ঞ্যান বা দক্ষতা কে অন্যদের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে নিজের পরিচিতি প্রকাশ করা যায় যাকে Self-Branding ও বলে।
Personal Branding বা Self-Branding করার জন্য নিজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা গুলোকে এমন ভাবে সবার কাছে উপস্থাপন করতে হয় যাতে মানুষের কাছে নিজের Authority বা বিশ্বাস তৈরি হয়।
এতে করে নিজের পরিচিতির পাশাপাশি পেশাদারিক জীবনেও দারুন ভাবে উপকার লাভ করা যায়।
একটি ইউটিউব চ্যানেল এর মাধ্যমে খুব সহজেই নিজের পরিচিতি বা Personal Branding তৈরি করা যায়।
ধরুন, আপনি একজন ভাল ওয়েব ডেভেলপার এবং এই বিষয়ে আপনার যথেষ্ট দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু আপনার এই দক্ষতা সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে অথবা আপনার এই দক্ষতা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না।
এক্ষেত্রে, আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে ইউটিউব ভিডিও তৈরির মাধ্যমে অন্যদেরকে জানতে বা শিখতে সহায়তা করতে পারেন তাহলে আপনার পরিচিতি যেমন বাড়বে তেমনি আপনার প্রতি সবার বিশ্বাস ও তৈরি হবে।
যেটি আপনাকে পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করবে- যেমন আপনাকে নতুন জব বা কাজ পেতে সাহায্য করবে।
২। জনপ্রিয়তা অর্জন
কারো যদি জনপ্রিয় হয়ে উঠার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা থেকে থাকে তাহলে ইউটিউব হতে পারে একটি সেরা প্লাটফর্ম। যেখানে নিজের তৈরি করা ভিডিওর মাধ্যমে অন্য সবার কাছে নিজের পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
এমন অনেক মানুষকেই খুজে পাওয়া যাবে যারা নিজেদের সবার সামনে তুলে ধরতে বা জনপ্রিয় করতে চায়। এবার সেটা হতে পারে কোন জ্ঞ্যান ও দক্ষতা দিয়ে, ট্যালেন্ট দিয়ে, অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে।
এক্ষেত্রে, একটি ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি নিজের জ্ঞ্যান, অভিজ্ঞতা এবং প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যেতে পারে।
ইউটিউবের কল্যাণে সারাবিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন এমন অনেক উদাহরণই খুজে পাওয়া যাবে।
কেউ যদি কোন বিষয়ে খুবই দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হয়ে থাকে অথবা প্রতিভা থেকে থাকে তাহলে সেই জ্ঞ্যান বা প্রতিভাকে সবার সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে নিজের পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করা যেতে পারে।
তাই, আপনারও যদি খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠার আশা থাকে এবং সবার কাছে নিজের পরিচিতি বৃদ্ধি করাতে চান তাহলে আপনার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করা উচিত।
৩। অন্যদের সাহায্য (Helping Others)
ইউটিউবিং শুরু করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারন হতে পারে অন্যদের সাহায্য করা। অন্যদের উপকার হয় এমন যেকোনো বিষয় নিয়ে একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করা যেতে পারে।
অন্যদের সাহায্য করার মাধ্যমে অন্যরকম একটা অনুভুতি বা আবেগ কাজ করে। যার জন্য অনেক মানুষই ইউটিউব চ্যানেল শুরু করেন অন্যদেরকে হেল্প বা সাহায্য করার জন্য।
এতে করে অন্যদের উপকারের পাশাপাশি সবার কাছে নিজের পরিচিতি বা জনপ্রিয়তা অর্জন করা যায়। এমন অনেক মানুষই আছেন যারা শুধুমাত্র ইউটিউব কে টাকা আয়ের মাধ্যম হিসাবেই ব্যবহার করেনা বরং তারা এটিকে বিভিন্ন কাজে যেমন অন্যদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্যও ব্যবহার করে থাকে।
এই ধরনের চ্যানেলে মূলত বিভিন্ন ধরনের Informational, Educational, Tutorial type content বা How to Video প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
আপনি যদি কোন বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞানী বা দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনি সেই দক্ষতা বা জ্ঞ্যান কে কাজে লাগিয়ে ইউটিউব চানেলের জন্য ভিডিও তৈরি করতে পারেন।
এতে করে আপনার তৈরি করা ভিডিওর মাধ্যমে অন্যরা যেমন উপকৃত হবে তেমনি আপনার প্রতি তাদের ভালবাসা এবং বিশ্বাসও তৈরি হবে। যেটি আপনাকে পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করবে।
আর এভাবেই অন্যদেরকে সাহায্য এবং সহযোগিতা করার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করা যেতে পারে।
৪। আয়ের সেরা মাধ্যম (Source of Online Income)
অনলাইনে আয় করার যতগুলো মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়টি সব থেকে সেরা।
কেননা একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করার জন্য বিশেষ জ্ঞান বা দক্ষতার প্রয়োজন হয়না বা খুব বেশি টাকা খরচ করার ও দরকার হয়না।
যেকেউ চাইলে একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করতে পারেন এবং নিজের পছন্দ মত ভিডিও তৈরি করে চ্যানেল এ আপলোড করতে পারেন।
একটি ইউটিউব চ্যানেলকে বিভিন্ন উপায়ে Monetize করা যায়। এবার সেটা হতে পারে গুগল Ads, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, কোম্পানি থেকে স্পন্সরশীপ বা অন্য যেকোনো উপায়।
ইউটিউব চ্যানেল এ বিজ্ঞাপন দেখানর মাধ্যমে সহজেই আয় করা যায়। চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই গুগল থেকে Approval পেতে পেতে হবে।
ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য লাভজনক ইউটিউব চ্যানেল টপিক বাছাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপযুক্ত একটি ইউটিউব চ্যানেল টপিক বাছাই করার মাধ্যমে ইউটিউবিং শুরু করে যেতে পারে।
ইউটিউব চ্যানেল এ পরিচিতি বৃদ্ধির সাথে অনেক গুলো আয়ের মাধ্যম বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি আয়ের পরিমাণ ও বেশি হবে।
৫। Sharing Creativity
প্রত্যেক মানুষের মাঝেই কোন না কোন প্রতিভা(Talent) থাকে। কেউ সেটা সহজেই প্রকাশ করতে পারে আবার কেউ সেটা সঠিক পরিবেশের অভাবে প্রকাশ করতে পারেনা।
যাইহোক, আপনিও যদি একজন Creative Person হয়ে থাকেন বা আপনার এমন কোন চিন্তাভাবনা বা প্রতিভা থেকে থাকে যা অন্যদেরকে সহজেই আকৃষ্ট করবে, তাহলে আপনি খুব সহজেই সেটি প্রকাশ করতে পারেন একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করার মাধ্যমে।
কেননা, ইউটিউব হল একটি সেরা প্লাটফর্ম, যেটিকে ব্যবহার করার মাধ্যমে যেকেউ চাইলে তার Creativity বা Talent প্রকাশ করতে পারে।
এরকম অনেক উদাহরণ খুজে পাওয়া যাবে যারা শুধু ইউটিউব প্লাটফর্মটিকে ব্যবহার করেই নিজেদের প্রতিভাকে প্রকাশ করতে পেরেছে এবং তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
কেউ বা ভাল গান গাইতে পারে, সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারে, ভাল অভিনয় করতে পারে, কেউ বা গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ফটোগ্রাফি সহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রতিভা সম্পন্ন হয়ে থাকে।
তাই একটি ইউটিউব চ্যানেল এর মাধ্যমে নিজের জ্ঞ্যান এবং ট্যালেন্ট এর বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যেতে পারে এবং সবার কাছে নিজের পরিচিতি বা জনপ্রিয়তা অর্জন করা যেতে পারে।
৬। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
ইউটিউব চ্যানেল শুরু করার লাভজনক আরেকটি কারণ হল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
ইউটিউব থেকে আয় করার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা অ্যাফিলিয়েট কমিশন।
একটি ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট পার্টনার হিসাবে কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সেবা প্রচার করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা যায়।
অনেকে নিজের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট এর পাশাপাশি ইউটিউব প্লাটফর্ম টিকে ব্যবহার করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে থাকেন।
অ্যাফিলিয়েট পার্টনার হিসেবে যে পণ্য বা সেবা প্রচার করা হবে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বা টিউটোরিয়াল ভিডিও তৈরি করার মাধ্যমে চ্যানেলে প্রকাশ করা যেতে পারে।
এক্ষেত্রে, অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যাতে, যে পণ্য বা সেবা প্রচার করা হবে সেটি যেন চ্যানলের নিশের সাথে সম্পর্কিত হয় এবং ভিউয়ার বা দর্শকরা তাতে আগ্রহী হয়।
তাই ইউটিউব থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করাটা খুবই লাভজনক হতে পারে।
৭। Source of Traffic
ইউটিউবকে ব্যবহার করে খুব সহজেই ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বা ভিজিটর নিয়ে আসা সম্ভব। অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এর মত ইউটিউবকে ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বৃদ্ধি করা যায়।
অনেকে ওয়েবসাইট এর ট্রাফিক নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন, পর্যাপ্ত ভিজিটর না থাকা বা ওয়েবসাইট এর প্রচার প্রচারনা নিয়েও।
এক্ষেত্রে, একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করার মাধ্যমে ব্লগ এর নিশ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করা যেতে পারে। এতে করে ইউটিউব চ্যানেলের পরিচিতির পাশাপাশি ওয়েবসাইট এর প্রচুর ভিজিটর নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
৮। ব্যবসার প্রচারনা
যেকোনো ব্যবসার প্রচার প্রচারনার জন্য ইউটিউব হল একটি সেরা প্লাটফর্ম। যেখানে ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরির মাধ্যমে মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে।
এখনকার প্রায় বেশিরভাগ স্মার্ট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান গুলো ইউটিউব কে ব্যবহার করছে নিজেরদের পরিচিতি বৃদ্ধি বা Brand Awareness তৈরি করার জন্য।
ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে যেকোনো ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে বিভিন্ন রকম ভিডিও তৈরি করা যেতে পারে যেমন, পণ্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, পন্যের ব্যবহার, প্রতিষ্ঠান এর সেবা সমুহ ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক তথ্য গ্রাহকদেরকে জানানো যেতে পারে।
এতে করে চ্যানেলের দর্শক সংখ্যা যেমন বাড়বে তেমনি ব্যবসার পরিচিতি এবং আয় ও বৃদ্ধি পাবে।
পরিশেষেঃ
তাহলে আপনারা জানলেন কেন একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করবেন, ইউটিউব চ্যানেল শুরু করার লাভ জনক কারণ গুলো কি কি এবং আপনার জন্য চ্যানেল শুরু করা উচিত হবে কিনা।
যাইহোক, একজন সফল ইউটিউবার হতে গেলে অবশই যথেষ্ট ধর্য এবং শ্রম দেয়া প্রয়োজন। চাইলেই সবাই সফল হতে পারেনা, সফল হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শ্রম এবং সময় ব্যয় করা উচিত।
ইউটিউব থেকে টাকা আয় করাই যদি আপনার প্রধান উদ্দেশ্য হয় তাহলে আপনাকে চ্যানেল শুরু করার পূর্বে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরী।
যেমন, প্রচুর সময় ব্যয় করার ইচ্ছা, ধর্য ধারন করা, নিয়মিত ভিডিও কন্টেন্ট পাবলিশ করা, নির্দিষ্ট Audience Target করা, সেরা চ্যানেল টপিক বাছাই করা সহ আরও অনেক গুলো বিষয় সম্পর্কে জ্ঞ্যান থাকা উচিত।