৬টি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এর তালিকা ২০২২

You are currently viewing ৬টি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এর তালিকা ২০২২

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) বা মুক্ত পেশা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন যেকেউ চাইলে ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অনলাইন থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং করে অনলাইন থেকে টাকা আয় করার অনেক গুলো উপায় রয়েছে।

ফ্রিল্যান্সিং করে অনলাইনে টাকা আয় করার জন্য যেমন কোন বিষয়ে সঠিক স্কিল বা দক্ষতা থাকা প্রয়োজন, ঠিক তেমনি ফ্রিল্যান্স জব বা কাজ পাওয়ার জন্য দরকার উপযুক্ত মাধ্যম বা প্লাটফর্ম।

Freelancing পেশায় শুধুমাত্র কোন বিষয়ে অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা থাকলেই হয়না, সেই দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে টাকা আয় করার জন্য প্রতিনিয়তই ফ্রিল্যান্স জব (Freelance Jobs) বা কাজের সন্ধান করতে হয়।

আর এক্ষেত্রে, যদি সঠিক কোন মাধ্যম বা প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানা না থাকে তাহলে বেশীরভাগ সময় কাজ পাওয়া নিয়ে হতাশ হতে হয়।

ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়ার জন্য অনলাইনে এমন অনেক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (Freelancing Marketplace) বা ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট রয়েছে। যেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফ্রিল্যান্স জব পাওয়া যায়।

কিন্তু সব ধরনের ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসই যে শতভাগ বিশ্বাসযোগ্য হবে বা সবার জন্য উপকারি হবে সেরকমটি নাও হতে পারে।

তবে, বর্তমানে বেশ কিছু জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস বা ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইট রয়েছে, যেগুলোতে প্রতিনিয়ত হাজারো ফ্রিল্যান্সাররা ফ্রিল্যান্সিং কাজের মাধ্যমে সফলভাবে অর্থ উপার্জন করছে।

সুতরাং, আপনিও যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন এবং ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করার জন্য সব থেকে সেরা এবং জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে জানতে চান এবং ফ্রিল্যান্সিং কাজ খুজে পেতে চান, তাহলে আজকের এই পোস্ট আপনাকে দারুন ভাবে সহযোগিতা করবে।

১। Fiverr

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসটি হল Fiverr। এখানে নুন্যতম ৫ ডলার থেকে শুরু করে হাজার ডলারেরও কাজ পাওয়া যায়। এই মার্কেটপ্লেসটির জনপ্রিয়তার কারণ এখানে খুব ছোট ছোট প্রোজেক্ট বা কাজ করে অর্থ উপার্জন করা যায়।

ফাইভার মার্কেটপ্লেসটিতে ডাটা এন্ট্রির কাজ থেকে শুরু করে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট, কন্টেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং সহ প্রায় ২০০টিরও অধিক ক্যাটেগরি রয়েছে। অনলাইনে ডেলিভারি করা যায় এমন প্রায় সব ধরনের ডিজিটাল প্রোজেক্ট বা কাজই এই ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।

Fiverr এ ফ্রিল্যান্সারদেরকে মূলত সেলার (Seller), এবং তাদের সার্ভিস গুলোকে গিগ (Gig) বলা হয়ে থাকে। আর যারা Client বা Customer অর্থাৎ এখানে যারা সার্ভিস গুলো কিনে থাকে তাদেরকে Buyer বলা হয়।

ফাইভার মার্কেটপ্লেস টিতে কাজ করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে, এরপর আপনি যে যে বিষয়ে দক্ষ সেই বিষয়ের ওপর আলাদা আলাদা ভাবে Gig তৈরি করে সার্ভিস গুলো বিক্রি করতে পারবেন। আর সেই গিগ গুলো বায়ারদের পছন্দ হলে আপনার গিগ অর্ডার করে আপনাকে কাজ দিবে।

নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার ক্ষেত্রে Fiverr মার্কেটপ্লেসটি সব থেকে উপযোগী একটি প্লাটফর্ম। বিশেষ করে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের কাছে বর্তমানে ফাইভার সব থেকে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস।

তাছাড়া এখানে বেশ কিছু Payment Method বা টাকা উত্তোলন করার সহজ মাধ্যম থাকায় এখানে নির্বিঘ্নে কাজ করা যায়।

২। Upwork- জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস

বর্তমানে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস তালিকার (Best Freelancing Marketplace List) মধ্যে অন্যতম এবং সব থেকে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস হল Upwork

যেকোনো ধরনের প্রফেশনাল অনলাইন কাজের জন্য Upwork খুবই জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম। এই মার্কেটপ্লেসে সাধারণত দুই ভাবে কাজ করা হয়, একটি প্রোজেক্ট ভিত্তিক (Project Based) এবং অন্যটি ঘণ্টা চুক্তি (Hourly Basis)।

Upwork এ ফ্রীল্যান্স জব যেমন সফটওয়্যার বা অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, কন্টেন্ট রাইটিং এন্ড ট্রান্সলেশন, ডিজিটাল মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং এন্ড ফাইন্যান্সিং সহ আরও বিভিন্ন ধরনের ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ পাওয়া যায়।

আপওয়ার্ক এ সাধারণত বায়ার বা ক্লাইন্ট রা কাজের পোস্ট করে থাকে এবং সেই পোস্ট এ ফ্রিল্যান্সাররা bid বা অ্যাপ্লাই করে থাকে কাজটি পাওয়া জন্য।

অর্থাৎ এখানে কাজ পাওয়ার জন্য আপনাকে অ্যাপ্লিকেশান (Application) করতে হবে, এবং কাজটি পাওয়া বা না পাওয়া সম্পূর্ণ নির্ভর করবে সেই অ্যাপ্লিকেশান টির ওপর।

তবে, এই মার্কেটপ্লেস টিতে কাজ করতে হলে অবশ্যই কোন বিষয়ের ওপর খুব ভালো দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাছাড়া নিয়মিত এবং ভালমানের কাজ পেতে হলে প্রোফাইলটিকেও ভালভাবে সাজিয়ে নিতে হবে। এতে করে কাজ পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে।

কেননা কোন ক্লাইন্ট তখনই কাজ করার জন্য হায়ার করবে যখন সেই ফ্রিল্যান্সার এর প্রোফাইল তাদের কাছে প্রফেশনাল বা গ্রহণযোগ্য মনে হবে।

৩। Freelancer.com

সারা বিশ্বে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নামকরা ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মটি হল Freelancer.com। ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য অন্যান্য যেসব প্লাটফর্ম গুলো রয়েছে তার মধ্যে এটি খুবই জনপ্রিয় এবং বেশ পুরাতন একটি মার্কেটপ্লেস।

এই মার্কেটপ্লেস টিতে প্রায় সব ধরনেই অনলাইন জব তথা ফ্রিল্যান্স জব পাওয়া যায়। এখানে ফ্রিল্যান্সিং কাজের ১৮০০টিরও অধিক ক্যাটেগরি রয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখো ফ্রিল্যান্সাররা এই প্লাটফর্ম এর সাথে যুক্ত ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য। তাছাড়া, এই প্লাটফর্মটির ব্যবহারকারী অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সার এবং বায়ার দুটোর সংখাই বেশি।

একেবারে শুরুর অবস্থায় বা নতুনদের জন্য এখানে কাজ পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। যেহেতু, এখানে প্রচুর দক্ষ ফ্রিল্যান্সার আছে, সেহেতু ফ্রিল্যান্স কাজ গুলো পেতে হলে অবশ্যই নিজস্ব দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

Freelancer Marketplace এ প্রোজেক্ট ভিত্তিক (Project Based) এবং ঘণ্টা চুক্তি (Hourly Basis) এই দুই ধরনে কাজের পাশাপাশি Contest ও রয়েছে। এখানে সাধারণত কাজ পাওয়ার জন্য প্রতিটি কাজে Bid করতে হয়।

৪। People Per Hour

ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য People Per Hour বেশ জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম, যেটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সাল থেকে। এখানে প্রায় ৩ মিলিয়নের মত ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের কাজের উপর দক্ষ।

এই ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ক্যাটেগরির ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়া যায়। এই প্লাটফর্মটি অনেকটা ফাইভার মার্কেটপ্লেস এর মত।

তবে, এখানে চাইলে নিজের সার্ভিস গুলো বিক্রি করা যায় অথবা কোন প্রোজেক্ট এ Bid করার মাধ্যমেও কাজ পাওয়া যায়। এখানে কাজ গুলো সাধারণত হয়ে থাকে ঘণ্টা চুক্তি ভিত্তিক।

যদি এই মার্কেটপ্লেসে কম্পিটিশন অনেক বেশি, তারপরও দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা সহজেই কাজ পেতে পারে যদি তাদের কাজের দক্ষতা ভালো থাকে এবং সেই সাথে প্রোফাইলে যদি ভালো রেটিং বা রিভিউ থাকে।

এখানে বেশ কিছু পেমেন্ট মেথড যেমন পেওনিয়ার, পেপাল, ও ব্যাংক ট্রান্সফার এর মাধ্যমে পেমেন্ট নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

৫। Guru

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের তালিকার মধ্যে আরেকটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস হল Guru। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান এই প্লাটফর্ম থেকে ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে তাদের কাজ গুলো করিয়ে নেয়।

এখানে, ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যাটেগরি রয়েছে। যেমন প্রোগ্রামিং এবং ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে Graphics Design, Writing and Translation, Sales and Marketing, Business and Finance, Education and Training, SEO, WordPress Website development, Data Entry সহ আরও বহু রকমের কাজের ক্যাটেগরি রয়েছে।

এখানে সাধারণত দুই ভাবে অর্থাৎ ঘণ্টা চুক্তি(Hourly) এবং ফিক্সড প্রাইস(Fixed Price) কাজ গুলো সম্পন্ন হয়ে থাকে। এখানে প্রতিনিয়তই বায়ার বা ক্লাইন্ট দের কাছ থেকে জব পোস্ট করা হয় এবং সেখানে ফ্রিল্যান্সাররা প্রতিটি কাজে বিড করার মাধ্যমে কাজ পেয়ে থাকে।

এই প্লাটফর্ম থেকে উপার্জিত অর্থ উত্তোলন করার জন্য বেশ কিছু Payment Methods যেমন পেপাল, পেওনিয়ার, বাংক ট্র্যান্সফার ইত্যাদি মাধ্যম রয়েছে।

৬। 99 Designs

এই ওয়েবসাইটটি মূলত ডিজাইনারদের জন্য সেরা একটি প্লাটফর্ম। অর্থাৎ, যারা ডিজাইন সম্পর্কিত কাজে বা গ্রাফিক্স ডিজাইনে দক্ষ তাদের জন্য 99 Designs প্লাটফর্মটি খুবই পরিচিত।

এই প্লাটফর্মটি লোগো ডিজাইনের জন্য বেশি পরিচিত হলেও এখানে ডিজাইন সংক্রান্ত অন্যান্য প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে। যেমন লোগো ডিজাইন থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট বা ওয়েব পেজ ডিজাইন, টিশার্ট ডিজাইন, প্রোডাক্ট পাকেজিং, বুক কভার, বিজনেস কার্ড, পোস্টার, প্রোডাক্ট লেবেল, সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ডিজাইন ইত্যাদি সহ আরও বহু রকমের কাজ রয়েছে।

এখানে বায়াররা তাদের ডিজাইন সংক্রান্ত কিছু দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে ডিজাইন তৈরি করে নেয়ার জন্য, আর ফ্রিল্যান্সাররা সে অনুযায়ী ডিজাইন তৈরি করে দেয়ার মাধ্যমে পেমেন্ট পেয়ে থাকে।

তাছাড়া, এখানে ডিজাইন Contest এ অংশগ্রহন করার মাধ্যমেও ফ্রিল্যান্সাররা বেশ ভালো পরিমাণ আয় করার সুযোগ পেয়ে থাকে।

যাইহোক, আপনার যদি ডিজাইন সম্পর্কিত কাজে অর্থাৎ গ্রাফিক্স ডিজাইনে খুব ভালো দক্ষতা থাকে, তাহলে এই মার্কেটপ্লেসটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে।

পরিশেষে

ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করার জন্য অনলাইনে অনেক ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট বা মার্কেটপ্লেস রয়েছে। ওপরে যেসব মার্কেটপ্লেস তথা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস লিস্ট (Best Freelancing Marketplace List) বা তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হল, এগুলো ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস রয়েছে।

তবে, সব ধরনের মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ করার সুযোগ থাকলেও পেমেন্ট নিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। আবার সব মার্কেটপ্লেস গুলোতে দক্ষতা অনুযায়ী কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা।

আর তাই, উপরে যেসব Freelancing Website বা Marketplace গুলো উল্লেখ করা হয়েছে, চাইলে এগুলোতে নিজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নির্দ্বিধায় কাজ করা যেতে পারে। প্রয়োজনে একের অধিক মার্কেটপ্লেস গুলোতে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করা যেতে পারে।

তবে, আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং এ একদম নতুন হয়ে থাকেন বা নতুন ফ্রিল্যান্সিং শিখছেন তাহলে শুরুতেই এসব মার্কেটপ্লেস গুলোতে অ্যাকাউন্ট তৈরি না করাই আপনার জন্য উপকারি হবে। বরং হাতে কিছুটা সময় নিয়ে আগে স্কিল ডেভেলপ করার দিকে মনোযোগ দিন।

এরপর বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস গুলোতে ঘুরে ঘুরে ফ্রিল্যান্সিং কাজ গুলো সম্পর্কে আইডিয়া নিন। এতে করে খুব দ্রুত ওইসব কাজ গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা হয়ে যাবে যা পরবর্তীতে আপনাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করবে।

This Post Has 2 Comments

  1. Techzboss.com

    It is very Helpful. Thank you

  2. Md. Jakirul Islam Apu Bhuiyan

    Many many thanks of this information.

Leave a Reply