মেয়েদের জন্য অনলাইন জব কোন গুলো, বা কিভাবে মেয়েরা ঘরে বসে অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে পারে, অথবা একজন মেয়ে হিসেবে অনলাইন থেকে আয় করার জন্য কোন কোন অনলাইন জব গুলো সব থেকে বেশি উপযোগী, ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেই প্রতিনিয়ত অনুসন্ধান করে বা জানার আগ্রহ প্রকাশ করে।
হয়তো আপনি একজন শিক্ষার্থী/ছাত্রী বা গৃহিণী, চাকুরীজীবী বা অন্য কোন পেশার মানুষ। কিন্তু আপনি একজন মেয়ে হিসেবে অবসর সময়গুলোকে কাজে লাগিয়ে অনলাইন থেকে অর্থ উপার্জন করতে চাচ্ছেন কিন্তু ভেবে পাচ্ছেননা কোন Online Jobs বা কাজ গুলো মেয়েদের জন্য বেশি উপযোগী।
আসলে অনলাইন থেকে টাকা আয় করার জন্য ছেলে অথবা মেয়েদের জন্য আলাদা কোন বাধা-ধরা নিয়ম নেই। অনলাইন থেকে যেকেউ চাইলে টাকা ইনকাম করতে পারে। প্রয়োজন শুধু কাজের দক্ষতা এবং কাজ করার মন মানসিকতা।
অর্থাৎ, আপনি যদি কোন বিষয়ে খুব ভালো দক্ষ হয়ে থাকেন বা আপনার এমন কোন কাজের প্রতি আগ্রহ আছে যা আপনি করতে পারবেন, তাহলে সেই বিষয়ের ওপর প্রয়োজনীয় স্কিল ডেভেলপ করে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার কিংবা পার্ট টাইম অথবা ফুল টাইম অনলাইন জব শুরু করতে পারেন।
যেহেতু অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটেগরির কাজ পাওয়া যায়, তাই যেকোনো ক্যাটেগরিতে নিজের দক্ষতা অর্জন করে অর্থ উপার্জন করা যেতে পারে।
তারপরও মেয়েদের জন্য অনলাইন জব করার প্রচলিত যেসব মাধ্যম বা উপায় রয়েছে সেগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি জনপ্রিয় কিছু কাজের তালিকা আপনি এই পোস্ট থেকে জেনে নিতে পারবেন।
মেয়েদের জন্য অনলাইন জব এর তালিকা (Best Online Jobs for Girls):
- ১। গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ২। ডিজিটাল মার্কেটিং
- ৩। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার
- ৪। ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
- ৫। কন্টেন্ট/ আর্টিকেল রাইটিং – Content Writing
- ৬। ডাটা এন্ট্রি – Online Data Entry Job
- ৭। এসইও এক্সপার্ট- Become an SEO Expert
- ৮। ভয়েস ওভার সার্ভিস
- ৯। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশান ডিজাইন- PowerPoint Presentation Design
- ১০। ওয়েবসাইট ডিজাইন
- ১১। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
- ১২। অনলাইন বিজনেস
- ১৩। ভিডিও এডিটিং
- ১৪। ব্লগিং
- ১৫। ওয়ার্ডপ্রেস জব
১। গ্রাফিক্স ডিজাইন- Graphics Design
মেয়েদের জন্য অনলাইন জব হিসেবে পছন্দের তালিকায় গ্রাফিক্স ডিজাইনের (Graphics Design) স্থান সব সময়েই প্রথম সারিতে।
বলতে গেলে মেয়েদের জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ গুলো সব চেয়ে বেশি পছন্দনীয় এবং মেয়েদের কাছে এই কাজের জনপ্রিয়তাও অনেক বেশি।
যদিও গ্রাফিক্স ডিজাইন ইন্ডাস্ট্রিতে ছেলে বা মেয়ে এটি কোন বিষয় নয়। তারপরও এই কাজের প্রতি মেয়েদেরই ঝোঁক অনেক বেশি।
তাছাড়া, বর্তমানে এই কাজটি সব থেকে বেশি জনপ্রিয় এবং লাভজনক হওয়ায়, এই কাজের প্রতি দিন দিন মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলছে। যার ফলে অনেকেই গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে Online Jobs বা অনলাইনে ক্যারিয়ার ডেভেলপ করছে।
অনলাইন জগতে এখন প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই কোন না কোন গ্রাফিক্স ডিজাইন করার প্রয়োজন হয়। যার ফলে এই ইন্ডাস্ট্রি তে কাজের আলাদা আলাদা ধরণ, কাজের রেট এবং চাহিদার পার্থক্য রয়েছে।
এই ইন্ডাস্ট্রিতে খুব সহজ কাজ থেকে শুরু করে অনেক জটিল কাজ তাই, কোন একটি বিষয়ে সঠিকভাবে স্কিল ডেভেলপ করে অনলাইনে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করা যেতে পারে।
Graphics Design ইন্ডাস্ট্রিতে যেসব কাজের আলাদা আলাদা সেক্টর রয়েছে- যেমনঃ
- Brand Identity Design/ Logo Design
- Photo Editing
- Apparrel Graphic Design
- Marketing and Advertising Design
- Packaging Design
- Web Design
- UI/UX Design
- Data Visualization & Infographic Design
- Print and Publication Design
- Graphic Illustration
২। ডিজিটাল মার্কেটিং- Digital Marketing
অনলাইনে কোন ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষের কাছে পরিচিতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভুমিকা সব থেকে বেশি।
শুধুমাত্র পরিচিতি বৃদ্ধির জন্যই নয়, কোন ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বৃদ্ধি কিংবা অধিক গ্রাহক খুজে পাওয়ার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব অনেক বেশি।
যার ফলে, বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনের নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য কিংবা নিজেদের পরিচিতি বৃদ্ধি করার জন্য দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ডিজিটাল মার্কেটারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে।
বিভিন্ন ধরনের ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত প্রচুর কাজ প্রতিনিয়তই তৈরি হচ্ছে। এছাড়া দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ তো রয়েছেই। ডিজিটাল মার্কেটিং কাজের যেমন চাহিদা রয়েছে তেমনি এই কাজ বেশ লাভজনকও বটে।
তাই, মেয়েদের মধ্যে যাদের ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা আছে বা এই বিষয়ে যাদের শেখার আগ্রহ প্রবল, চাইলে তারা ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে অনলাইন জব শুরু করতে পারে। সফল ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য প্রয়োজনে এই বিষয়ে কোর্স বা ভালোভাবে প্রশিক্ষন নেয়া যেতে পারে।
গ্রাফিক্স ডিজাইন ইন্ডাস্ট্রি এর মত ডিজিটাল মার্কেটিং এরও আলাদা আলাদা জব সেক্টর রয়েছে। যেমন,
- Social Media Marketing
- Search Engine Optimization
- Content Marketing
- Email Marketing
- Affiliate Marketing
- Pay Per Click Advertising (PPC)
৩। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার- Social Media Manager
যদিও Social Media Manager মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং এরই একটি অংশ। কিন্তু এই কাজের আলাদা একটি সেক্টর এবং চাহিদা রয়েছে।
বিশেষ করে অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে এই কাজের বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া, দেশীয় এবং বিদেশী অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বা বিজনেস পেজ ম্যানেজমেন্ট করার জন্য আলাদাভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে।
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের সাধারণত যেসব কাজ গুলো করতে হয় যেমন- নতুন পোস্ট তৈরি ও পাবলিশ করা, পেইড ক্যাম্পেইন পরিচালনা, কমিউনিটি গড়ে তোলা, মেসেজিং, লাইক, কমেন্ট, শেয়ারিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদিসহ আরও বেশ কিছু কাজ করতে হয়।
সুতরাং, চাইলে আপনিও একজন Social Media Manager হিসেবে অনলাইনে জব শুরু করতে পারেন। যদি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা থেকে থাকে।
তবে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে গেলে অবশ্যই কিছু স্কিল এর প্রয়োজন হবে যেমন, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, কমিউনিকেশন স্কিল (Communication skill), ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing) সম্পর্কে ধারণা, গ্রাফিক্স ডিজাইন স্কিল, বিভিন্ন ধরনের টুলস ব্যবহারে দক্ষতা ইত্যাদি।
৪। ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট- Virtual Assistant
ঘরে বসে মেয়েদের জন্য অনলাইনে আয় করার আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হল ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট(Virtual Assistant) হয়ে কাজ করা।
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট জব টি বেশীরভাগ মেয়েদের কাছে বেশ পছন্দনীয়। কেননা ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট জবটিকে চাইলে পার্ট টাইম জব হিসেবেও করা যায়।
একজন Virtual Assistant হিসেবে আপনাকে যেসব কাজ করতে হতে পারে, যেমন,
কোন প্রতিষ্ঠানের বা ক্লাইন্টের ইমেইল বা ফোন কল ম্যানেজমেন্ট করা, মিটিং শিডিউল করা, ডাটা কালেকশন ও রেকর্ড করা, কন্টেন্ট রাইটিং ও পাবলিশ করা, মার্কেট রিসার্চ, গ্রাফিক্স ডিজাইন, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি কাজ ছাড়াও আরো অনেক ধরনের কাজ রয়েছে। ক্লাইন্ট কিংবা প্রতিষ্ঠানভেদে Virtual Assistant এর কাজের ধরণ একেক রকমের হয়ে থাকে।
সুতরাং, একজন নারী/মেয়ে হিসেবে আপনার যদি অনলাইনে এসব কাজগুলো করার দক্ষতা থাকে, তাহলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিংবা ক্লাইন্ট এর জন্য Virtual Assistant হিসেবে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
৫। কন্টেন্ট/ আর্টিকেল রাইটিং- Content Writing
যাদের লেখালেখি করার অভিজ্ঞতা বেশ ভালো বা লেখালিখি করতে যাদের ভালো লাগে, তারা চাইলে লেখালিখিকে অর্থাৎ কন্টেন্ট রাইটিংকে পেশা হিসেবে অনলাইন থেকে আয় রোজগার করতে পারে।
বর্তমানে ভালমানের কন্টেন্ট রাইটারদের চাহিদা ব্যাপক। বিভিন্ন Freelancing Marketplace গুলোতে কন্টেন্ট রাইটিং এর ওপর প্রচুর কাজ পাওয়া যায়। এছাড়াও, লোকাল অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্লগ বা নিউজ ওয়েবসাইটের জন্য লেখালিখি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে দক্ষ কন্টেন্ট লেখকদের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
কন্টেন্ট রাইটাররা সাধারণত রাইটিং এর জন্য ঘণ্টা প্রতি নুন্যতম ১০ ডলার থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারে। এছাড়াও, নির্দিষ্ট ওয়ার্ড হিসেব করেও কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে আয় করা যায়।
সুতরাং, ঘরে বসে আপনি যদি অনলাইন থেকে সহজে আয় করতে চান, তাহলে কন্টেন্ট লেখালিখিকে একটি জব বা পেশা হিসেবে নিতে পারেন।
৬। ডাটা এন্ট্রি – Online Data Entry Job
অনলাইনে টাকা আয় করার জন্য প্রচলিত যেসব কাজ রয়েছে, তার মধ্যে ডাটা এন্ট্রির কাজ গুলো সব থেকে বেশি জনপ্রিয়।
তুলনামুলক ভাবে অন্যান্য অনলাইন কাজের থেকে এই কাজটি অনেক সহজ হওয়ায় প্রায় সবার কাছেই এই কাজের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।
তাছাড়া, এই কাজ করার জন্য খুব বেশি দক্ষতা বা যোগ্যতা অর্জন করার প্রয়োজন হয়না। ফলে যাদের কম্পিউটার সম্পর্কে বেসিক ধারণা আছে এবং ডাটা এন্ট্রি কাজ করার জন্য যেসব সফটওয়্যার রয়েছে, যেমন Microsoft Word, Excel, PowerPoint Presentation এগুলোর ব্যবহার, এবং টাইপিং স্পীড ভালো থাকলে যেকেউ এই কাজ শুরু করতে পারে।
সুতরাং, ঘরে বসে মেয়েদের অনলাইন থেকে সহজে আয় করার সব থেকে উপযোগী মাধ্যম হল Online Data Entry Jobs। Fiverr, UpWork সহ আরও বেশ কিছু জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস গুলোতে ডাটা এন্ট্রির প্রচুর কাজ পাওয়া যায়।
তবে, এই কাজ টি তুলনামূলক সহজ হওয়ায় এই কাজে প্রচুর প্রতিযোগিতা রয়েছে, যার ফলে কাজ পাওয়া কিছুটা কঠিন হতে পারে নতুনদের জন্য।
৭। এসইও এক্সপার্ট- Become an SEO Expert
বর্তমানে অনলাইন জব গুলোর মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় এবং লাভজনক একটি জব হল Search Engine Optimization Service বা এসইও সেবা।
এখনকার সময়ে ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়ের জন্য অনলাইন থেকে ভালো পরিমাণ আয় করার ক্ষেত্রে Search Engine Optimization বা SEO খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে বর্তমানে SEO এর বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে এবং দিন দিন এ কাজের পরিমাণ বেড়েই চলছে। দেশীয় কিংবা বিদেশী যেকোনো প্রতিষ্ঠানগুলোকে সার্চ র্যাঙ্কিং (Search Engine Ranking) এ নিয়ে আসার জন্য ভালমানের এসইও এক্সপার্টদের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
আর, SEO Expert রা ওই সকল প্রতিষ্ঠানের হয়ে SEO সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের কাজ করার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে থাকে।
সুতরাং, আপনার যদি এসইও সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে বা এই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, তাহলে অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কিংবা ক্লাইন্ট এর জন্য SEO Servicing Job অফার করতে পারেন।
৮। ভয়েস ওভার সার্ভিস- Voice Over Service Online Job
মেয়েদের জন্য অনলাইন জব করার আরেকটি জনপ্রিয় উপায় হল ভয়েস ওভার সার্ভিস। এখানে, মূলত ক্লাইন্ট বা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া Script অনুযায়ী নিজের ভয়েস দিয়ে রেকর্ড করে তা অডিও ফাইল হিসেবে তৈরি করা।
ইউটিউব ভিডিও গুলোতে লক্ষ করলে আপনি এধরনের অনেক ভিডিও দেখতে পাবেন যেখানে খুব সুন্দর ভাবে ভয়েস দিয়ে ভিডিও গুলোকে তৈরি করা হয়েছে।
বর্তমানে ভয়েস অভার আর্টিস্টদের (Voice Over Artists) বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও তৈরিতে এবং ভিডিও গুলোকে সুন্দরভাবে প্রেজেন্ট করার জন্য Voice Over Service এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। অনেক ইউটিউব চ্যানেলই এধরনের কাজ করার জন্য ভয়েস অভার আর্টিস্টদের নিয়োগ দিয়ে থাকে।
সুতরাং, আপনি যদি খুব সুন্দর ভাবে কথা বলতে পারেন বা আপনার ভয়েস যদি আকর্ষণীয় হয়, তাহলে আপনি চাইলে এটিকে একটি সার্ভিস হিসেবে অনলাইনে বিভিন্ন ক্লাইন্ট বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিতে পারেন
অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের বাহিরেও এধরনের কাজ করার বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে। যা আপনি ঘরে বসে আপনার অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে আয় রোজগার করে নিতে পারবেন।
৯। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশান ডিজাইন- PowerPoint Presentation Design
অনেকে PowerPoint Presentation নামটির সাথে পরিচিত। আবার অনেকে হয়তো এটিকে ব্যবহারও করে থাকেন বিভিন্ন প্রেজেন্টেশন ডিজাইন করার কাজে।
চাইলে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশান ডিজাইনার হিসেবে খুব সহজেই আয় রোজগার করা যেতে পারে। বিভিন্ন Seminar, Meetings, Conference, Classroom, Business Meeting গুলোতে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে খুব সুন্দর ভাবে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ডিজাইন করার প্রয়োজন হয়ে থাকে।
মেয়েদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা PowerPoint Presentation Tool ব্যবহার করে খুব সুন্দর সুন্দর ডিজাইন তৈরি করে ফেলতে পারে। চাইলে এধরনের স্কিল কে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রফেশনাল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য সুন্দর সুন্দর প্রেজেন্টেশান ডিজাইন তৈরি করার মাধ্যমে আয় করা যেতে পারে।
মূলত, প্রেজেন্টেশন ডিজাইন করার জন্য ক্লাইন্ট বা প্রতিষ্ঠানই সব ধরনের কন্টেন্ট যেমন ছবি বা লেখা দিয়ে দিবে, যেগুলো ব্যবহার করে আপনি প্রফেশনাল প্রেজেন্টেশন ডিজাইন তৈরি করে দিতে পারেন নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে।
১০। ওয়েবসাইট ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট – Web Design & Development
মেয়েদের জন্য অনলাইন জব হিসেবে আরেকটি জনপ্রিয় সেক্টর হল ওয়েবসাইট ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট।
বর্তমানে ছোট, বড় বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। একেকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একেক রকম ডিজাইনের ওয়েবসাইট তৈরি করার প্রয়োজন হয়ে থাকে।
যার ফলে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ওয়েবসাইট ডিজাইনারদের এবং ডেভেলপারদের চাহিদা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং জগতে ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট সেক্টরটি বর্তমানে সব থেকে বেশি জনপ্রিয়।
বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলোতে Website Design and Development সম্পর্কিত কাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তাই, অনলাইন থেকে ভালো মানের অর্থ উপার্জন করার জন্য এবং অনলাইনে নিজের সফল একটি ক্যারিয়ার দাড় করানোর জন্য ওয়েব ডিজাইন ইন্ডাস্ট্রিকে বেছে নেয়া যেতে পারে।
ওয়েবসাইট ডিজাইনার হিসেবে অনলাইনে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নেয়ার জন্য প্রয়োজনে ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট এর কোর্স করা যেতে পারে।
১১। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং- Affiliate Marketing
অনলাইন থেকে প্যাসিভ ইনকাম (Passive Income) করার জন্য Affiliate Marketing বেশ জনপ্রিয় একটি নাম। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে অনেকে বেশ ভালো পরিমাণ আয় রোজগার করতে পারে। এখানে নিজের ইচ্ছেমাফিক যেকোনো সময়ে কাজ করে আয় করা যায় বিধায়, অনেকের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয়।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সাধারনত কোন প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস গুলো প্রোমোট করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি কমিশন পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, প্রতিষ্ঠান বা ওয়েবসাইট থেকে আপনাকে দেয়া লিংকে প্রবেশ করে কেউ যদি কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কিনে থাকে, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আপনাকে একটি কমিশন দেয়া হবে।
যাইহোক, আপনার যদি কন্টেন্ট রাইটিং, এসইও, ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট ও ডিজিটাল মার্কেটিং করার অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে আপনি চাইলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংকে একটি অনলাইন জব হিসেবে নিতে পারেন এবং স্বাধীন ভাবে অনলাইন থেকে আয় রোজগার করতে পারেন।
১২। অনলাইন বিজনেস- Online Business
বাংলাদেশে বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে অনলাইনে বিজনেস করার বিষয়টি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর দেশের অনেক নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন অনলাইন ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। এখন অনেক মেয়েই অনলাইনে ব্যবসা করার মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলছে।
অনলাইনে ব্যবসার কাজে অনেকে অনেক ধরনের অনলাইন প্লাটফর্ম গুলো বেছে নিচ্ছে। যার মধ্যে ফেসবুক এবং ইউটিউব এর ব্যবহার সব থেকে বেশি। আর এখনকার সময় Facebook Business তথা ফেসবুকে ব্যবসা সম্পর্কে কম বেশি অনেকেই পরিচিত।
অনেকে শুধুমাত্র ফেসবুক ব্যবহার করেই নিজেদের ব্যবসাগুলোকে সফল একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারছে। আর ফেসবুকের কল্যানে এখন বেশীরভাগ নারীরা নিজেদের ব্যবসায়িক আইডিয়া গুলোকে কাজে লাগিয়ে বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারছে।
সুতরাং, একজন নারী/মেয়ে হিসেবে আপনার কাছে যদি কোন প্রোডাক্ট আইডিয়া থাকে বা আপনি কোন প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারেন, তাহলে সেই প্রোডাক্ট নিয়ে চাইলে অনলাইনে বিজনেস শুরু করতে পারেন।
১৩। ভিডিও এডিটিং- Video Editing
বর্তমান সময়ে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ভিডিও এডিটরদের চাহিদা ব্যাপক। বিশেষ করে ইউটিউবকে কেন্দ্র করে এই কাজের ক্ষেত্র এবং চাহিদা দিন দিন যেন বেড়েই চলছে।
ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও এডিটিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কিংবা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের কাজ ছাড়াও আরও অনেক ধরনের কাজে ভিডিও এডিটরদের বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে।
একজন মেয়ে হিসেবে যাদের এই বিষয়ে বেশ ভালো ইন্টারেস্ট আছে বা যারা Video Editing সম্পর্কে বেশ ভালো জ্ঞ্যান আছে তারা চাইলে ভিডিও এডিটিং সম্পর্কিত জব গুলো করে অর্থ উপার্জন করতে পারে।
চাইলে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে ভিডিও এডিটর হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং করা যেতে পারে অথবা লোকাল কোন প্রতিষ্ঠানের হয়ে পার্ট টাইম অথবা ফুল টাইম জব করা যেতে পারে।
১৪। ব্লগিং- Blogging
অনলাইনে আয় করার যতগুলো জনপ্রিয় মাধ্যম বা উপায় রয়েছে, তার মধ্যে ব্লগিং এর অবস্থান শীর্ষে। Blogging এ যেমন নিজের পছন্দমত সময়ে স্বাধীনভাবে কাজ করা যায়, তেমনি এখান থেকে খুব ভালো পরিমাণ টাকা আয় করার সুযোগ রয়েছে।
যার ফলে অনেকের কাছে ব্লগিং এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি এবং অনেকে ব্লগিং কে ফুল টাইম পেশা হিসেবে নিয়ে থাকে। যেকেউ চাইলে Blogging শুরু করতে পারে।
শিক্ষার্থী বা ছাত্র/ছাত্রী থেকে শুরু করে, গৃহিণী, শিক্ষক, চাকুরীজীবী, বা অন্য যেকোনো পেশার মানুষ নিজের একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করে ব্লগিং শুরু করে দিতে পারে।
সাধারণত একটি ব্লগ থেকে বেশ কয়েকটি উপায়ে টাকা আয় করা যায়, যেমন, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, গুগোল এডস, স্পন্সরশীপ, প্রোডাক্ট/সার্ভিস বিক্রি ইত্যাদি মাধ্যমগুলো বেশি জনপ্রিয়।
সুতরাং, মেয়েদের ক্ষেত্রে যারা অবসর সময়গুলোকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে অনলাইন থেকে খুব ভালো পরিমাণ টাকা আয় করতে চান তাদের জন্য ব্লগিং হতে পারে সব থেকে সেরা একটি উপায়।
১৫। ওয়ার্ডপ্রেস জব- WordPress Jobs
ঘরে বসে মেয়েদের জন্য অনলাইন জব করে আয় করার আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হল ওয়ার্ডপ্রেস। ওয়ার্ডপ্রেসের নাম হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন, হয়তো অনেকে এটিকে ব্যবহারও করছেন।
কিন্তু চাইলে এই ওয়ার্ডপ্রেসকে ব্যবহার করেই অনলাইন থেকে টাকা আয় করার দারুন একটি পথ তৈরি করে ফেলা যায়।
মূলত, ওয়ার্ডপ্রেস হল একটি কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Content Management System) সংক্ষেপে CMS ও বলা হয়।
সহজ কথায় ওয়ার্ডপ্রেস হল ওয়েবসাইট তৈরি করার সফটওয়্যার। যেটিকে ব্যবহারে করে ওয়েবসাইট তৈরি থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট তথা যাবতীয় কাজ গুলো করা হয়ে থাকে।
যাইহোক, ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করার মাধ্যমে অনলাইন থেকে সহজেই টাকা আয় করা যায়। অনলাইনে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস গুলোতে ওয়ার্ডপ্রেসের প্রচুর কাজ পাওয়া যায়। মার্কেটপ্লেসের বাহিরেও ওয়ার্ডপ্রেসকে ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরির প্রচুর কাজ পাওয়া যায়।
পরিশেষে
আজ থেকে কয়েক বছর আগেও মেয়েদের জন্য Online Jobs থাকবে বা ঘরে বসে মেয়েদের অনলাইনে আয় করার উপায় থাকবে এ বিষয়গুলো হয়তো অনেকেরই জানা ছিলনা বা সেই কাজের সুযোগও ছিলোনা।
কিন্তু কালের পরিক্রমায় সে দিন বদলে গিয়েছে। অনলাইনের দুনিয়ায় এখন ছেলে কিংবা মেয়ে যেকেউ চাইলে ঘরে বসেই অনলাইনে জব বা বিভিন্ন ধরনের কাজ করার মাধ্যমে অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে পারে।
বর্তমানে প্রতিনিয়তই অনলাইনে কাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে অধিকাংশ ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনমুখী হওয়ায়। যার ফলে ছেলেদের পাশাপাশি এসব অনলাইন কাজ গুলোতে মেয়েদের আগ্রহ এবং মেয়েদের কাজ করার পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাছাড়া, বাংলাদেশের এমন অনেক তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ঘরে বসে অনলাইন থেকে প্রতি মাসে লাখ টাকা ইনকাম করছে। যা দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভুমিকা পালন করছে।
যাইহোক, ওপরে মেয়েদের জন্য অনলাইন জব এর যে তালিকা দেয়া হল, এগুলো ছাড়াও অনলাইনে অর্থ উপার্জন করার মত আরও অসংখ্য কাজ রয়েছে।
কিন্তু অনলাইন থেকে আয় করার জন্য এবং অনলাইনে নিজের একটি ক্যারিয়ার দাড় করানোর জন্য অবশ্যই সঠিকভাবে পরিশ্রম করে যেতে হবে হবে ধৈর্য ধরে কাজে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই কেবল সফলতা আসবে।