যদিও একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলা খুবই সহজ একটি বিষয় কিন্তু অনেকের কাছে এটি বেশ জটিল মনে হতে পারে। বিশেষ করে নতুনদের মধ্যে প্রফেশনাল ইউটিউব চ্যানেল খোলা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়।
যেমন, কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হয় বা ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম গুলো কি কি, ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কি কি লাগে, বা কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল কাস্টমাইজ করতে হয় ইত্যাদি সহ আরও অনেকগুলো বিষয় রয়েছে।
যাইহোক, একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য বা চ্যানেল শুরু করার জন্য, প্রথমে চ্যানেলের জন্য টপিক বা নিশ বাছাই করে নিতে হয়।
অর্থাৎ, আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলে কোন ধরনের ভিডিও বা কন্টেন্ট পাবলিশ করবেন সেটি নির্ভর করবে আপনি কোন ধরনের টপিক বা নিশ নিয়ে কাজ করছেন।
লাভজনক একটি নিশ বা চ্যানেল টপিক বাছাই করার ওপরেও চ্যানেলের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে।
ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম ২০২২
প্রথমত একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করার জন্য জিমেইল আইডি থাকতে হবে। যেহেতু ইউটিউব গুগল এর একটি প্রতিষ্ঠান তাই ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে হলে একটি গুগল অ্যাকাউন্ট তথা জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে।
আপনি চাইলে আগে থেকেই একটি জিমেইল আইডি খুলে নিতে পারেন আপনার নাম এবং ফোন নাম্বার ব্যবহার করে।
অথবা, আপনি চাইলে সরাসরি ইউটিউব Sign In অপশন থেকেই নতুন একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে পারবেন।
ইউটিউব চ্যানেল মুলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হল পার্সোনাল ইউটিউব চ্যানেল(Personal YouTube Channel) এবং অন্যটি হল ব্র্যান্ড ইউটিউব চ্যানেল(Brand YouTube Channel)। আপনি চাইলে যেকোনো একটি চ্যানেল তৈরি করে ইউটিউবিং শুরু করতে পারেন।
তবে, প্রফেশনাল দিক বিবেচনা করে এবং ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে একটি বিজনেসস বা ব্র্যান্ড ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করাই সব থেকে ভালো।
তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে একটি পার্সোনাল বা ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে হয়ঃ
একটি পার্সোনাল ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করার জন্য যেকোনো ব্রাউজার(Browser) থেকে youtube.com এ ভিজিট করতে হবে। এরপর ইউটিউব ড্যাশবোর্ড এর ডান পাশে থাকা Sign In অপশন এ গিয়ে জিমেইল আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে sign in করে নিতে হবে।

আপনার যদি পূর্বে জিমেইল আইডি খোলা না থাকে সেক্ষেত্রে youtube.com এ sign in লিংক থেকে Create account এ ক্লিক করে আপনার নতুন একটি জিমেইল আইডি তৈরি করে নিতে পারেন।

এরপর সেই জিমেইল আইডি দিয়ে লগ ইন করলেই ইউটিউব এ আপনার একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে।
মুলত একটি পার্সোনাল ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করার জন্য ইউটিউব ড্যাশবোর্ড থেকে প্রোফাইল আইকন এ ক্লিক করলে create a channel অপশনটি দেখা যাবে।
এই লিংক এ ভিজিট করলে How you’ll Appear নামে একটি পপ আপ বক্স ওপেন হবে যেখানে চ্যানেলের নাম এবং প্রোফাইল পিকচার আপলোড করে Create Channel এ ক্লিক করলেই একটি পার্সোনাল ইউটিউব চ্যানেল তৈরি হয়ে যাবে।
এরপর, ইউটিউব চ্যানেল ড্যাশবোর্ড থেকে Customize Channel অপশন এ গেলে YouTube Studio ওপেন হবে। যেখান থেকে চ্যানেল এর যাবতীয় বিষয় যেমন, প্রোফাইল পিকচার বা লোগো যুক্ত করা, ব্যানার ইমেজ যুক্ত করা, চ্যানেল এর নাম পরিবর্তন সহ অন্যান্য কাজ গুলো সম্পাদন করা যাবে।

যাইহোক এভাবে খুব সহজেই আপনার একটি পার্সোনাল ইউটিউব তৈরি করে নিতে পারবেন এবং আপনার চ্যানেল এ ভিডিও আপলোড করে তা প্রকাশ করতে পারবেন।
ব্র্যান্ড ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়মঃ
একটি ব্র্যান্ড ইউটিউব চ্যানেল(Brand YouTube Channel) খোলার জন্য youtube.com থেকে প্রোফাইল আইকন এ ক্লিক করে settings option এ যেতে হবে। এরপর Create a New Channel এ ভিজিট করলে নিচের মত একটি বক্স ওপেন হবে। যেখানে আপনার ইউটিউব চ্যানেল এর নাম দিয়ে Create বাটন এ ক্লিক করলেই নতুন একটি চ্যানেল তৈরি হয়ে যাবে।

আর এভাবেই মূলত আপনার একটি বিজনেস বা ব্র্যান্ড ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে নিতে পারবেন। এরপর আসা যাক চ্যানেল কাস্টমাইজেশন নিয়ে।
ইউটিউব চ্যানেল কাস্টমাইজেশনঃ
ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম গুলোর মধ্যে সব থেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল চ্যানেলটিকে সঠিক ভাবে কাস্টমাইজ করে নেয়া। অর্থাৎ, ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করার পর চ্যানেলটিকে ভালভাবে কাস্টমাইজ করে নিতে হয়। আপনার ইউটিউব চ্যানেলটিকে কাস্টমাইজ করার জন্য আপনাকে চ্যানেল ড্যাশবোর্ড(Dashboard) থেকে উপরে ডান পাশে Customize Channel অপশনটিতে যেতে হবে।
এই অপশন টিতে ক্লিক করলে YouTube Studio ওপেন হবে। যেখান থেকে আপনি আপনার পছন্দ মত ইউটিউব চ্যানেলটিকে সাজাতে তথা কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন।
Channel Customization থেকে আপনি Layout, Branding, Basic Info নামে তিনটি অপশন পাবেন।
Basic Info: এই অপশন থেকে আপনি আপনার চ্যানেল এর নাম এবং চ্যানেল সম্পর্কে Description লিখতে পারবেন। প্রয়োজনে চ্যানেলের ভাষা এবং লিংক যুক্ত করতে পারবেন। পাশাপাশি Contact info তে আপনার ইমেইল এড্রেস ও যোগ করতে পারবেন।
Branding: এই অপশনটিতে চ্যানেলের লোগো বা প্রোফাইল পিকচার যুক্ত করা, ব্যানার ইমেজ, এবং ভিডিও ওয়াটারমার্ক অপশন গুলো পাবেন।
প্রোফাইল পিকচার এর ক্ষেত্রে ইমেজ সাইজ হবে 98*98 পিক্সেল এবং ফাইল সাইজ 4MB অথবা তার নিচে হতে হবে। ব্যানার ইমেজ এর ক্ষেত্রে ইমেজ সাইজ হবে 2048*1152 পিক্সেল এবং ফাইল সাইজ 6MB এর নিচে হতে হবে।
ইউটিউব চ্যানেল এর জন্য প্রোফাইল পিকচার এবং ব্যানার তৈরি করার জন্য সব থেকে জনপ্রিয় ফ্রি টুল দুটি হল Canva এবং Snappa। এই অনলাইন টুল গুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই প্রোফেসনাল মানের প্রোফাইল পিকচার বা ব্যানার ইমেজ তৈরি করে ফেলা যায়। আপনি চাইলে নিজেই আপনার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য এসব অনলাইন টুল গুলো ব্যবহার করতে পারেন।
ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোডঃ
সফল ভাবে ইউটিউব চ্যানেল খোলা হয়ে গেলে, আপনি আপনার চ্যানেলে পছন্দ মত ভিডিও প্রকাশ করতে পারবেন।
চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করার জন্য প্রথমে আপনাকে ইউটিউব চ্যানেল ড্যাশবোর্ড(Dashboard) থেকে ওপরে ডান পাশে থাকা Create অপশনটিতে ক্লিক করলে Upload করার অপশন পাবেন।

যেখান থেকে আপনার সেই কাঙ্ক্ষিত ভিডিও আপলোড করে চ্যানেল এ প্রকাশ করতে পারেন।
তবে ভিডিও আপলোড করার পর অবশ্যই ভিডিওটিকে ভালভাবে অপটিমাইজ করে নিতে হবে। যেমন ভিডিওর Title ব্যবহার করা, ভিডিও Description লেখা, প্রয়োজনীয় Tag ব্যবহার করা, Category বাছাই করা, ইত্যাদি।
পাশাপাশি ভিডিওকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে এবং দর্শকদের আকৃষ্ট করতে অবশ্যই ভিডিও থাম্বনেইল(Thumbnail) যুক্ত করা যেতে পারে।
পরিশেষেঃ
তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই শিখে গিয়েছেন কিভাবে একটি প্রফেশনাল ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হয় বা ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম গুলো কি, এবং যে যে বিষয় মাথায় রেখে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হয়।
সর্বোপরি, একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করা হয়ে গেলে, একজন সফল ইউটিউবার হিসেবে চ্যানেলে নিয়মিত ভিডিও প্রকাশ করতে হয়।
কেননা, ইউটিউবিং এ সফল হতে গেলে অবশ্যই নিয়মিত এবং মানসম্পন্ন ভিডিও চ্যানেলে প্রকাশ করা জরুরী। এতে করে যেমন চ্যানেলে দর্শক সংখ্যা এবং সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তেমনি খুব দ্রুত সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়।
তবে, সফল একটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ইউটিউব এর নিয়ম কানুন মেনে চলাটাও জরুরী। অন্যথায় চ্যানেল বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মোঃ ইসমাইল হোসেন সিয়াম